ঢাকাই ছবির প্রখ্যাত পরিচালক ও অভিনেতা কাজী হায়াতের ছেলে কাজী মারুফ এখন আর সিনেমায় কাজ করেন না। স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন সুদূর আমেরিকায়।

অভিনয় যার রক্তে তিনি কেন দেশ ছেড়ে মার্কিন মুলুকে প্রবাসী হলেন? কেমন চলছে তার প্রবাসী জীবন?

কাজী মারুফ অকপটেই জানালেন, রুটি-রুজির তাগিদে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। আর সবার মতো এখানে কাজ করে জীবন নির্বাহ করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে থেকে গত ১৬ মার্চে লাইভে এসে ভক্তদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানালেন ‘ইতিহাস’ খ্যাত অভিনেতা।

সিনেমা ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কারণ কী প্রশ্নে কাজী মারুফ বলেন, ‘ওই সময় বাংলাদেশে সিনেমা হচ্ছিল না। তেমন কাজ ছিল না। কিন্তু কিছু তো করে খেতে হবে। তাছাড়া আমাদের ‘ছিন্নমূল’ সিনেমাটি ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তির কথা ছিল। সেভাবেই টার্গেট করেছিলাম। কিন্তু সিনেমাটি মুক্তি দিতে দেয়নি একটি বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। পরিচালক ছিলেন আমার আব্বা। তারা আমার আব্বাকে বলেছিলেন, আমরা রিলিজ করতে না দিলে কীভাবে রিলিজ করবেন। আমার আব্বার মতো মানুষকে এই কথা শুনতে হয়েছিল। সেদিন আব্বা বাসায় এসে বললেন, আমি এই বয়সে যুদ্ধ করব? আমি চাই না তুমিও যুদ্ধ করো এদের সঙ্গে। চলে যাও আমেরিকা। এসব কারণেই বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এসেছি।’

এর সঙ্গে কিছু পারিবারিক কারণও যুক্ত হয়েছিল তার। এ চিত্রনায়ক বলেন, ‘একবার আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই। হাসপাতালে আমার মেয়েকে এমনভাবে স্যালাইনের সিরিঞ্জ শরীরে প্রবেশ করানো হচ্ছিল, সেটা আমি দেখতে পারছিলাম না। সেই দৃশ্য দেখে চুপ হয়ে ছিলাম। তখন আমার চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম। সেদিনই তিনি সিদ্ধান্ত নেই এক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাব।’

যুক্তরাষ্ট্রে নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত আছেন কাজী মারুফ। বললেন, ‘আমি ভালো আছি’। দেশে ছেড়েছেন বলে সিনেমা ছাড়েননি। যুক্তরাষ্ট্র থেকেই সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা আছে তার।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে বাবা কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ইতিহাস’ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডে অভিষেক ঘটে মারুফের। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত করেন। সিনেমাটি ব্যবসা সফল হয়, সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান মারুফ। এরপর প্রায় ৩৭টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।

‘দেহরক্ষী’ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসা পান। তবে ‘ইভটিজিং’ সিনেমায় তার কাশেম চরিত্রটি বেশি দর্শকপ্রিয়তা পায়।

২০১৪ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত তার সর্বনাশা ইয়াবা ছবিটিও ব্যবসা সফল হয়। তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘অন্ধকার’, ‘অন্য মানুষ’, ‘ক্যাপ্টেন মারুফ’, ‘শ্রমিক নেতা’,‘ গরিবের ছেলে বড়লোকের মেয়ে’, ‘আইন বড় না সন্তান বড়’, ‘রাস্তার ছেলে’, ‘পাঁচ টাকার প্রেম’, ‘অশান্ত মন’, ‘আমার স্বপ্ন’, ‘মা আমার জানর, ‘আমার মা আমার অহংকার’, ‘মায়ের জন্য মরতে পারি,‘ বড়লোকের দশদিন গরিবের একদিন’, ‘বস্তির ছেলে কোটিপতি’, ‘ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না’, ‘মায়ের জন্য পাগল’, ‘এক টাকার ছেলে কোটি টাকার মেয়ে’, ‘অস্ত্র ছাড়ো কলম ধরো’, ‘ওয়ান্টেড’ অন্যতম।

 

 

কলমকথা/ বিথী